• মোঃ এরফান আলী
পরিচালক, মৌসুমী সংস্থা, নওগাঁ।
এই ঈদে নিরানন্দে কাটছে যাদের দিন !! ব্যক্ত করি সমবেদনা, দ্রুত ফিরে আসুক সুদিন।
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দের হিল্লোল নিয়ে আসে পবিত্র ইদুল ফিতর। ধনী গরিব নির্বিশেষে নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা, অপেক্ষাকৃত ভালো খাবারের আয়োজন করা, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের সান্নিধ্যে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করার রেওয়াজ অনেকদিনের।
গত বছর হতে করোনা ভাইরাসের অতিমারির কারণে জনজীবন একপ্রকার বিপর্যস্ত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের পরিবর্তে ব্যয় সংকোচন করে টিকে থাকার প্রান্তান্তর চেষ্টা করছে। অর্থনৈতিক সংকোচনের ফলে নতুন কর্মসংস্থান তো হয়নি বরং কর্মহীন হয়ে পরেছে বেসরকারি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত অসংখ্য মানুষ।
করোনার প্রথম ঢেউ হতেই সরকার সাধ্যানুযায়ী বিভিন্ন খাতে যেমন: তৈরি পোশাক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, প্রান্তিক কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে পর্যায়ক্রমে তা প্রদান করেছেন। প্রত্যক্ষভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এসকল খাতে সহায়তা প্রদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
পরোক্ষভাবে যারা ভূমিকা রাখছেন কিংবা এসকল খাতে কাজ করার জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে সেকল খাত একেবারেই উপেক্ষিত।
দেশে প্রায় ৪৫ হাজার কিন্ডারগার্টেনে ৭ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান চলে ভাড়া বাড়িতে। ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব প্রতিষ্ঠান শতভাগই নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপরে। টিউশন ফির টাকাই বাড়ি ভাড়া, নানা ধরনের বিল ও শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়। অভিভাবকরা টিউশন ফি দিচ্ছেন না, তাই শিক্ষকদের বেতন ও বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না। বেসরকারি শিক্ষা খাতের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সকলে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও দেশের এমপিওভুক্ত কলেজ সমূহের স্নাতক পর্যায়ের নন এমপিও শিক্ষক যাদের বেতন হয় শিক্ষার্থীদের বেতন হতে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত। এই ইদে তারা কিন্তু নিরানন্দ।
দেশের ৪৬ টি পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত ২ হাজার ২৬৯টি কলেজে ২৮ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করেন। এই বিশাল ছাত্র সমাজের একটি বড় অংশই অদম্য মেধাবী। শহরে অবস্থান করে পড়াশুনা করার আর্থিক স্বচ্ছলতা তাদের পরিবারের নেই। টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন কাজ করে তারা নিজেদের পূর্ণ/আংশিক ব্যয় নির্বাহ করেন এমনকি অনেকেই পরিবারের ব্যয়ও নির্বাহ করেন। তারাও ইদে নিরানন্দ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশে চাকরি প্রার্থী বেকারের সংখ্যা ২৭ লক্ষ। (উক্ত সালের পর আর কর্মসংস্থান জরিপ হয়নি) এদের মধ্যে অনেকে স্বল্প শিক্ষিত এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কিংবা খণ্ডকালীন খাতে নিয়োজিত। তবে একটি বড় অংশ কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত। যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণ শিকারের নেশায় ছুটে চলেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই টিউশনি করে নিজের ব্যয় নির্বাহ করেন। দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে কোন চাকরির পরীক্ষা হয়না বললেই চলে। এদের প্রতিক্ষার প্রহর যেন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। বেড়েই চলেছে দীর্ঘশ্বাস। ইতোমধ্যে অনেকে চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। কারো বাবা-মা মৃত্যুর পূর্বে সন্তানের কর্মসংস্থান দেখে যেতে পারেন নাই। কারো প্রেমিক/প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এদেরও ঈদ কিন্তু নিরানন্দ।
মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট আকুল আরজ আমাদের রোজা, তারাবি, নেক আমল প্রভৃতির মধ্যে যে ভুলত্রুটি ছিলো তা ক্ষমা করে দিয়ে এসবের অছিলায় দ্রুত করোনার অতিমারি দূর করে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরিয়ে দিন। হাসি ফুটুক নিরানন্দে ঈদ কাটানো এসব মানুষের মুখে। করোনার কারণে ছুটি আরো বিলম্বিত হলে সরকারেরও উচিত বিকল্প পন্থার মাধ্যমে এসব মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজীকরণ করা।
সংগ্রহ ঃ রহিদুল ইসলাম রাইপ
নওগাঁ প্রতিনিধি
Leave a Reply